পিয়াস রায়ের গল্প ‘জন্মদিন’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৫৫:০৩ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০১৬ ০ বার পড়া হয়েছে

1441423_754084791275183_1835795244_nঘড়ির কাটায় টিকটিক! সময় রাত ২ টা বেজে ৩৬। চারদিকে সুনসান নীরবতা। আরিফ ইজি চেয়ারে বসে ফিরে গেল ২৫ বছর আগে। আরিফের আগামীকাল জন্মদিন। বায়না ধরেছে এবার জন্মদিনে তাকে একটা খেলনা ট্রেন কিনে দিতে হবেই। সাব্বিরের একটা আছে। তার ও একটা চাই।অভাবের সংসার ওদের। নুন আনতে পান্তা ফুরায় । বাবা অস্ফুটভাবে বললেন,আচ্ছা! আরিফের জন্য সে রাত ছিল আনন্দের রাত। পরদিনই সে মালিক হতে চলেছে রেলগাড়ির।যদিও বাস্তবে রেলগাড়ি দেখেনি। সাব্বিরের মা আজ কতকিছু বলল ওকে একবার একটু ছুয়ে দেখেছে বলে। -মা,রেলগাড়ি তে চরলে কেমন লাগে? -চড়িনি তো বাবা, কিভাবে বলব তোকে? -আজ আরিফের মা কি বলেছে জানো। আমাদের নাকি রেলগাড়ি কেনার মুরোদ নেই। মা মুরোদ মানে কি? -অত কিছু শুনতে হয় না বাবা,যাও ঘুমাও। ঘুম যেন আসেই না আরিফের। প্রবল উত্তেজনায় টগবগ করছে সে। তাড়াতাড়ি ড্রইং খাতা নিয়ে বসলো সে । একটা ছবি একে ফেলল । মা বাবা আর সে । হাতে একটা রেলগাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । নিচে ছোট করে ক্যাপশন লিখেছে “শুভ জন্মদিন আরিফ” মা এর দিকে তাকাতেই দেখতে পেল মা এর মুখটা কেমন যেন কাল হয়ে গেল । -ওমা ছবিটা ভাল হয় নি বুঝি -ডুকরে কেঁদে উঠে আরিফকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ।আরিফ এর মাথায় রেলগাড়ির ঝকঝক শব্দ । ড্রইং খাতা বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে গেল সে । মা তার পাশে গিয়ে কপালে চুমু দিল । খাতাটা বুক থেকে নামিয়ে দিতে গেল । কিন্তু কি যেন তার নামাতেই ইচ্ছা হল না!কেমন মমতায় খাতাটা বুকে জড়িয়ে ধরে আছে আরিফ । -ছেলেকে এবার রেলগাড়ি কিনে দিও আরিফের বাবা -চারদিকে এত ধারদেনা । বেতন পাইনি এখনো । এর মধ্যে বিলাসিতা করার সুযোগ কোথায়?ছেলেকে কিছু দিতেও পারি না হতভাগ্য বাবা আমি । পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাবা কাজে চলে গেলেন । একটা স্কুলের সামান্য দপ্তরি । যাওয়ার আগে চুমু দিলেন আরিফের কপালে । কানে ফিসফিস করে বললেন আজ আনবো তোর রেলগাড়ি । আরিফ সাব্বিরকে বলেও ফেলেছে রেলগাড়ির কথা । দুপুর গড়িয়ে বিকেল গেল । বাবা আর ফেরে না । সন্ধ্যা হয় হয় । -মা কখন ফিরবে বাবা? -বুঝতেছি না তো রে হতাৎ দরজায় কড়া নাড়ে যেন কে? মা দরজা খুলে দিল । দরজায় দাঁড়ানো বরকত চাচা -মাগো,শফিকের এক্সিডেন্ট হয়েছে । বারবার বলতেছিল ছেলেটার আজ জন্মদিন । রেলগাড়ি কিনতে হবে । জনতা মোড়ের গিফটের দোকানের সামনে একটা ট্রাক ওকে চাপা দিল । পাগলের মত দৌড়ে ছুটে যান আরিফের মা হাসপাতালে । হঠাত এক ঝটকা হাওয়ায় টবে লাগানো গোলাপ গাছটা নড়ে ওঠে । ২৫ বছর কিভাবে যেন চলে গেল সময়টা ।এ কি!!পুবকোনে আবছা আলোয় এ কার মুখ । এ যে তার বাবা । কিন্তু কিভাবে সম্ভব!!বাবা তো বাচেনি । হাতে সেই রেলগাড়ি । চোখ কচলাতে কচলাতে দেখলো বাবা ই দাড়িয়ে আছে । পুরু ফ্রেমের সেই অবিকল চশমা । নাকের নিচে কাঁচাপাকা গোফ । বাবারা মনে হয় এমন ই হয় । সন্তানের শেষ আবদার টা মেটানোর জন্য মহাকাল এর পথ পাড়ি দেয় । টিং টিং করে টেক্সট মেসেজ আসলো ফোনে । টেক্সট করেছে আরিফের বেস্ট ফ্রেন্ড সাদিয়া । “শুভ জন্মদিন আরিফ সাহেব” আবার ঘরের পূর্ব কোনে তাকায় আরিফ । আবছা আলোয় রেলগাড়ি হাতে বাবাটাকে আর দেখা যাচ্ছে না এবার ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পিয়াস রায়ের গল্প ‘জন্মদিন’

আপডেট সময় : ১১:৫৫:০৩ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০১৬

1441423_754084791275183_1835795244_nঘড়ির কাটায় টিকটিক! সময় রাত ২ টা বেজে ৩৬। চারদিকে সুনসান নীরবতা। আরিফ ইজি চেয়ারে বসে ফিরে গেল ২৫ বছর আগে। আরিফের আগামীকাল জন্মদিন। বায়না ধরেছে এবার জন্মদিনে তাকে একটা খেলনা ট্রেন কিনে দিতে হবেই। সাব্বিরের একটা আছে। তার ও একটা চাই।অভাবের সংসার ওদের। নুন আনতে পান্তা ফুরায় । বাবা অস্ফুটভাবে বললেন,আচ্ছা! আরিফের জন্য সে রাত ছিল আনন্দের রাত। পরদিনই সে মালিক হতে চলেছে রেলগাড়ির।যদিও বাস্তবে রেলগাড়ি দেখেনি। সাব্বিরের মা আজ কতকিছু বলল ওকে একবার একটু ছুয়ে দেখেছে বলে। -মা,রেলগাড়ি তে চরলে কেমন লাগে? -চড়িনি তো বাবা, কিভাবে বলব তোকে? -আজ আরিফের মা কি বলেছে জানো। আমাদের নাকি রেলগাড়ি কেনার মুরোদ নেই। মা মুরোদ মানে কি? -অত কিছু শুনতে হয় না বাবা,যাও ঘুমাও। ঘুম যেন আসেই না আরিফের। প্রবল উত্তেজনায় টগবগ করছে সে। তাড়াতাড়ি ড্রইং খাতা নিয়ে বসলো সে । একটা ছবি একে ফেলল । মা বাবা আর সে । হাতে একটা রেলগাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । নিচে ছোট করে ক্যাপশন লিখেছে “শুভ জন্মদিন আরিফ” মা এর দিকে তাকাতেই দেখতে পেল মা এর মুখটা কেমন যেন কাল হয়ে গেল । -ওমা ছবিটা ভাল হয় নি বুঝি -ডুকরে কেঁদে উঠে আরিফকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ।আরিফ এর মাথায় রেলগাড়ির ঝকঝক শব্দ । ড্রইং খাতা বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে গেল সে । মা তার পাশে গিয়ে কপালে চুমু দিল । খাতাটা বুক থেকে নামিয়ে দিতে গেল । কিন্তু কি যেন তার নামাতেই ইচ্ছা হল না!কেমন মমতায় খাতাটা বুকে জড়িয়ে ধরে আছে আরিফ । -ছেলেকে এবার রেলগাড়ি কিনে দিও আরিফের বাবা -চারদিকে এত ধারদেনা । বেতন পাইনি এখনো । এর মধ্যে বিলাসিতা করার সুযোগ কোথায়?ছেলেকে কিছু দিতেও পারি না হতভাগ্য বাবা আমি । পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাবা কাজে চলে গেলেন । একটা স্কুলের সামান্য দপ্তরি । যাওয়ার আগে চুমু দিলেন আরিফের কপালে । কানে ফিসফিস করে বললেন আজ আনবো তোর রেলগাড়ি । আরিফ সাব্বিরকে বলেও ফেলেছে রেলগাড়ির কথা । দুপুর গড়িয়ে বিকেল গেল । বাবা আর ফেরে না । সন্ধ্যা হয় হয় । -মা কখন ফিরবে বাবা? -বুঝতেছি না তো রে হতাৎ দরজায় কড়া নাড়ে যেন কে? মা দরজা খুলে দিল । দরজায় দাঁড়ানো বরকত চাচা -মাগো,শফিকের এক্সিডেন্ট হয়েছে । বারবার বলতেছিল ছেলেটার আজ জন্মদিন । রেলগাড়ি কিনতে হবে । জনতা মোড়ের গিফটের দোকানের সামনে একটা ট্রাক ওকে চাপা দিল । পাগলের মত দৌড়ে ছুটে যান আরিফের মা হাসপাতালে । হঠাত এক ঝটকা হাওয়ায় টবে লাগানো গোলাপ গাছটা নড়ে ওঠে । ২৫ বছর কিভাবে যেন চলে গেল সময়টা ।এ কি!!পুবকোনে আবছা আলোয় এ কার মুখ । এ যে তার বাবা । কিন্তু কিভাবে সম্ভব!!বাবা তো বাচেনি । হাতে সেই রেলগাড়ি । চোখ কচলাতে কচলাতে দেখলো বাবা ই দাড়িয়ে আছে । পুরু ফ্রেমের সেই অবিকল চশমা । নাকের নিচে কাঁচাপাকা গোফ । বাবারা মনে হয় এমন ই হয় । সন্তানের শেষ আবদার টা মেটানোর জন্য মহাকাল এর পথ পাড়ি দেয় । টিং টিং করে টেক্সট মেসেজ আসলো ফোনে । টেক্সট করেছে আরিফের বেস্ট ফ্রেন্ড সাদিয়া । “শুভ জন্মদিন আরিফ সাহেব” আবার ঘরের পূর্ব কোনে তাকায় আরিফ । আবছা আলোয় রেলগাড়ি হাতে বাবাটাকে আর দেখা যাচ্ছে না এবার ।