বর্ণাঢ্য আয়োজনে ইবিতে বাংলা নববর্ষ বরণ

- আপডেট সময় : ১২:৫৩:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০ বার পড়া হয়েছে
জাঁকজমকপূর্ণ বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ বরণ করে। আজ ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ) বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার সূচনা করেন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য। বৈশাখী সাজে সজ্জিত হয়ে এতে অংশ নেন হাজারো শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দও এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি, লাঙ্গল, মাথাল, পালকি, ঢেঁকি, একতারা ইত্যাদি শোভাযাত্রায় এক ভিন্ন মাত্রা দান করে। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার (ভারঃ) জনাব এস এম আব্দুল লতিফ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, প্রভোস্ট, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা এবং বিভাগীয় ও অফিস প্রধানবৃন্দ ।
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় বাংলা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার উপস্থিত সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজ ভালোবাসা বিনিময়ের দিন – ভালোবাসা বিনিময় করে জীবনকে সমৃদ্ধ করার দিন, আনন্দে অবগাহন করার দিন। আজ আমরা অত্যন্ত স্বতস্ফূর্তভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি যেন এই দিনটি বহমান থাকে বছরজুড়ে। তিনি বলেন আমরা হাজার মুজিবের এক মুজিব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে যে চেতনায় এ জাতি মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আমাদেরকে এই বৈশাখে সেই চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। উপাচার্য বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বে রয়েছি, তাঁদেরকে সরকারের এই উদ্যোগে আন্তরিকভাবে অংশ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, জঙ্গীবদী তৎপরতা মোকাবেলা করতে হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনাকে আরও সুদৃঢ়ভাবে মনের মধ্যে ধারণ এবং চিরস্থায়ী করতে হবে। এই চেতনা চর্চার মাধ্যমেই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবো।
উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমান বক্তব্যের শুরুতে সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে, ঐক্যবদ্ধ করে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন অনন্য দিন আর দ্বিতীয়টি নেই। তিনি বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ মানে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা। বাঙালি জাতির শ্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই চেতনাকে ধারণ করে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সবাইকে সেই চেতনা ধারণ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। উপ-উপাচার্য বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উৎসব ভাতা চালু করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে যা বিরল। তিনি বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হোক, আমাদের গর্বের ঐতিহ্য যেন আমরা রক্ষা করতে পারি, এই হোক আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর ১৪২৩ বরণের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় সবুজে ঘেরা ছায়াসুশীতল আমতলায় বাংলামঞ্চ, বিভিন্ন বিভাগ ও হলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শত কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো……”। বাংলামঞ্চের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে গান, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক, আবহমান বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরে কোরিওগ্রাফি এবং একটি গীতি আলেখ্য ‘মহুয়ার পালা’ অনুষ্ঠিত হয়। উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহিনুর রহমানও অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। মঙ্গলময় পথ চলার প্রত্যয়ে আবৃত্তি ও সুরের মূর্ছনায় বৈশাখী আবহে ক্যাম্পাস মেতে ওঠে বিপুল আনন্দযজ্ঞে।
নববর্ষবরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শেখ হাসিনা হল ও খালেদা জিয়া হলে ছিল বাঙালির চিরচেনা পান্তার আয়োজন। পহেল বৈশাখ উপলক্ষ্যে হলসমূহ আলোকসজ্জিত এবং বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন বিভাগ ঢাক-ঢোল সহযোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।